
গাজী মোহাম্মদ হানিফ, ফেনী :-
ফেনী শহরের আরামবাগসহ আশপাশে^র এলাকার কয়েক হাজার পরিবারে গ্যাস সংযোগ থাকলেও সময়মত জ্বলছেনা চুলা। চরম বিপাকে গৃহীনিরা। খাবার সংকটে পড়েছে বয়োবৃদ্ধ ও শিশু কিশোররা। শহরের পুর্ব উকিল পাড়া, পেট্টোবাংলা, বাঁশপাড়া ও সহদেবপুর এলাকার বাসা বাড়ীতেও একই দশা। আরামবাগ এলাকায় এক গৃহীনি স্বামী, সন্তান ও শ্বশুরসহ পরিবারের আট সদস্যের খাবার নিয়ে নিয়মিত বিপাকে পড়েন। দুই ছেলে সকালে স্কুলে যায়। অফিসের কাজে স্বামীও সকাল ৯টার মধ্যে বের হতে হয়। কিন্তু সময়মতো তিনি খাবার তৈরি করতে পারেন না। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার তৈরি করা নিয়ে প্রতিদিন তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। গ্যাসের চাপ না থাকায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারছেন না। এ চিত্র শুধু দু-একটি বাসাবাড়ির নয়, শহরতলির প্রায় প্রতিটি বাড়ির চিত্র একই রকম। অথচ জেলার সর্বত্র গ্যাস লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেডের আওতাধীন ফেনীতে গ্যাস সংকট নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
লাইনের দূর্বলতা ও গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বাখরাবাদ ডিস্ট্রিবিউশনের ফেনীর ব্যবস্থাপক বাপ্পি শাহরিয়ার। জানা গেছে, ফেনী ও কুমিল্লা কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা ও কালো তালিকাভুক্ত কিছু ঠিকাদার অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুয়া চাহিদাপত্র ও কার্যাদেশ তৈরি করে তারা প্রতিনিয়ত অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। এতে সরকার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে, অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় লাইনে গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে তীব্র গ্যাস সংকটে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অফিসে বছরের পর বছর হাজারও আবেদন ঝুলে থাকলেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।
বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। তবুও ফেনী শহরের পশ্চিম রামপুর, সোনাপুর, উত্তর সহদেবপুর, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া এলাকায় ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চোরাই পথে নতুন অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এখনো জেলায় প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। বার বার অবৈধ সংযোগ বিছিন্নকরেও গ্যাস লুট ঠেকানো যায়নি। এসব এলাকা ভাগ করে ভুয়া রশিদ দিয়ে ফিটাররা (মাঠকর্মী) গ্যাস বিল উত্তোলন করছে।
অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না, যাচ্ছে অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। অনেক ঠিকাদার ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ডিমান্ড নোট ও চুক্তিপত্রের টাকাও আত্মসাৎ করছে। এতে করে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ কারণে গ্যাসের চাপ না থাকায় বৈধ গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শহরের আরামবাগ এলাকার বাড়ি মালিক আবদুল হামিদ সবুজ জানান, তার সাততলা বাড়িতে ২৪টি পরিবার ভাড়া থাকে। সবার বাসায় গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলে না। ভাড়াটিয়ারা গ্যাসের বিল দিয়েও চুলা জ্বালাতে পারে না। ভোর ৪টার দিকে গ্যাস চলে যায় এবং রাত ১১ টার পর আসে। আরামবাগ এলাকার বাড়ী মালিক হাজী ইব্রাহীম ও বারেক আহম্মদে ভুঞা জানান গ্যাস সংযোগ থাকার পরও বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। প্রতি মাসে অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
বাড়ীর মালিক আবদুর রাজ্জাক বলেন এভাবে গ্যাস সংকট না কাটলে আমরা লাইন বন্ধ রেখে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। আবুল কাশেম নামে এক ভুক্তভোগী জানান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি । সবসময় শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস দিয়ে আমাদের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে ক্ষতি পূরণ চেয়ে মামলা করারও হুমকি দেন তিনি।
বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলায় প্রায় ৩২ হাজার আবাসিক ও ব্যবসায়িক গ্রাহক রয়েছেন। অসাধু ঠিকাদারদের তালিকা করে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। পাশাপাশি গ্যাসের তীব্র সংকটের কথা মাথায় রেখে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালানো হবে বলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কবে নাগাদ গ্যাস সংকটের অবসান হবে সে ব্যাপারে বলতে পারেনি ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।
বাখরাবাদ ডিস্ট্রিবিউশনের ফেনীর ব্যবস্থাপক বাপ্পি শাহরিয়ার জানান, আরামবাগ পূর্বউকিল পাড়ার গ্যাস লাইনটি অনেক পুরাতন। তৎকালিন ব্যবহার কারী অনুযায়ী লাইন স্থাপন করা হয়েছিলো। এখন গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন। কিন্ত গ্রাহক অনুযায়ী লাইন বৃদ্ধি করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইন সম্প্রসারনের জন্য কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় কি পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে তার পরিসংখ্যানও দিতে পারেনি বাখরাবাদ।