জেপুলিয়ান দত্ত জেপু,চকরিয়াঃ
চকরিয়ায় পৌরশহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও অবৈধ ক্লিনিক। এসব অবৈধ ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের নেই কোনো স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন। অনুমোদনহীন ব্যাঙের ছাতার মত বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে গলাকাটা ব্যবসা। এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক প্রতিষ্ঠান রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এদিকে,বিগত মে থেকে জুন পর্যন্ত বদরখালী,খুটাখালী ও ডুলাহাজারা বাজারে চকরিয়া উপজেলা কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাহাতুজ্জামান ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত এর অভিযান চালিয়ে এক ডজনের উপর অবৈধ ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল সিলগালা ও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও তা অমান্য করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠছে। এ ধরনের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মধ্যে ডুলাহাজারা বাজারের কেয়ার ল্যাব প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এছাড়াও অবৈধ কাগজপত্রবিহীন.আইডিয়াল প্যাথলজি প্রোঃ জসিম, ডুলাহাজারা ল্যাব হাউজ প্রোঃ মোঃ জসীম উদ্দিন, সেবা প্যাথলজি প্রোঃ লিটন কেয়ার ল্যাব,প্রোঃ জামাল উদ্দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের বাণিজ্য চালাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এ ধরণের অনুমোদনহীন শত শত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নেই প্রয়োজনীয় পরিবেশ,দক্ষ ল্যাব টেকনেশিয়ান ও যথাযত ইন্সট্রুমেন্ট। এ ভাবে অবৈধ বিভিন্ন ক্লিনিক বসিয়ে মালিকপক্ষ হতদরিদ্র অসচেতন রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এ সব ক্লিনিকে নেই কোনো একাডেমিক সার্টিফিকেটধারী অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তার ও টেকনেশিয়ান।
এ ধরণের ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভূয়াঁ অদক্ষ হাতুড়ে ডাক্তারেরা ভুল চিকিৎসা করে রোগীকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুকূপে। নানা রকম পরীক্ষার অজুহাতে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে এসব ভূয়াঁ ডাক্তার ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ যৌথভাবে চালাচ্ছে ব্যবসা। বিশাল বিল-ভাউচার রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
চকরিয়া উপজেলাসহ সারা দেশে জেলা,উপজেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও পরীক্ষাগার। যাদের নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ও যথাযত পরিবেশ। নেই কোনো উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়।
এ প্রেক্ষিতে ২৯ মে (রবিবার) চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশনায় উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিদর্শন ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানে ২ টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ৩টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সিলগালা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব,মোঃ রাহাতুজ্জামান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইফতেখারুল ইসলাম ও ডাঃ সাইমুল ইসলাম, সেনিটারি ইনস্পেক্টর এবং পুলিশ সদস্য বৃন্দ । এ অভিযানে নিবন্ধন না থাকায় উপজেলার
একুশে ডায়াগনস্টিক সেন্টার,সেন্ট্রাল হাসপাতাল, বদরখালী মর্ডান ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,বদরখালী ল্যাব হাউস,ও বদরখালী জেনারেল হাসপাতাল ল্যাব।
এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলোকে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত বন্ধ করে সিলগালা করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত বলেন,চকরিয়ায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতাল। এ সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযান টিম মাঠে থাকবে।
এছাড়া চকরিয়া ম্যাক্স হাসপাতাল, সিটি হাসপাতাল, শেভরন হাসপাতালকে উপযুক্ত ডক্যুমেন্টস দাখিলের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার / ল্যাবগুলোতে পরিদর্শন চলতি সময়েই করা হবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত জানান,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযান পরিচালনায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ একযোগে কাজ করেছে। তবে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে লাগামহীন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের এই অভিযান অব্যাহত রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অপরদিকে,গত ৩০ মে(সোমবার) চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত’র নেতৃত্বে চকরিয়ার খুটাখালী ও ডুলহাজারায় এক অভিযানে পাঁচটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারসহ ক্লিনিক বন্ধ ও সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন,মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাইমুল ইসলাম,ডাঃ আ জ ম সাদেক ও সিনেটারী ইন্সপেক্টর। এর মধ্যে খুটাখালীর ডক্টরস ল্যাব,খুটাখালী প্যাথলজি সেন্টার, খুটাখালী ফজল ফার্মেসীর রোগী ভর্তি করার রুম ও ডুলাহাজারর সেবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,ডুলাহাজারার কেয়ার ল্যাব। এ সময় উপস্থিত
এদিকে গত ১৬ মে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাহাতুজ্জামানের নেতৃত্বে চকরিয়া সিটি হাসপাতাল থেকে মাইনুদ্দিন নামের এক ভূঁয়া ডাক্তার গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় ভ্রাম্যমান আদালত তাকে এক বছরের জন্য জেল হাজতে প্রেরণ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। ওই ভূঁয়া ডাক্তার মাইনুদ্দিন জেল হাজতে অবস্থানকালে কিছিুদিন পূর্বে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে বলে জানা গেছে।