মুনতাসির তাসরিপ, দশমিনাঃ
“স্যারের নামে নালিশ দেয়, সাহস তো কম না” এমন বাক্য ধ্বনিত করে হেটে যাচ্ছিলেন পটুয়াখালীর দশমিনার এক অজ্ঞাত পরিচয়ের লোক। পরিচয় জানতে চাইলে জানা যায় সে নলখোলা বাজারের কাছেই দিনমজুরি করেন। নাম তার জলিল। কিন্তু কোন স্বার্থে সে জোড়ালো কন্ঠে এগিয়ে আসলেন উপজেলা পরিষদের সামনে? কেনোই বা করলেন মানববন্ধন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দশমিনায় প্রথমবারের মতো এমন একজন ইউএনও স্যারকে পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীদের জুতাপেটা করে এলাকা ছাড়া করতে চাই।
শনিবার (০৮ অক্টোবর) সকাল থেকেই এমন হাজারো ধ্বনি ভাসছে দশমিনার পথপ্রান্তরে। কিন্তু কি এমন ঘটেছে?
পটুয়াখালীর দশমিনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলালের বিরুদ্ধে দশমিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের তাপস নামক এক অজ্ঞাত ব্যাক্তি বাদী হয়ে এবং সাত জনকে সাক্ষী রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ প্রেরণ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লাখ টাকা দিলে সবাই দোকান করতে পারবে, প্রত্যেক স্কুলে অফিসারদের পাঠিয়ে চাঁদা আদায় করান, খাম নিয়ে শিক্ষকদের দেখা করতে বলেন, কিছু বলতে গেলে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখান।
কিন্তু সমগ্র দশমিনা ঘুরাঘুরি করে এমন কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি বরঞ্চ সর্বস্তরের মানুষ তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। দশমিনা উপজেলা সদরের প্রায় দশটির মতো মিষ্টির দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, তাপস মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বা তাপস নামে দশমিনায় কোনো মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছিল না।
তবে কি তাপস নামধারী ছদ্মবেশে অন্য কেউ ষড়যন্ত্র হাকাচ্ছেন? এমনটাই প্রশ্ন দশমিনাবাসীর। শনিবার(০৮ অক্টোবর) সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় ইউএনও’র নামে করা অভিযোগের ফাইল ছবিটি। এরপর থেকেই তোলপাড় চলছে দশমিনায়। কেউই এমন অমানবিক
কাজকে মানতে পারছেন না। অনেকে রীতিমতো হাস্যরসিক হিসেবেও নিয়েছেন বটে। আবার অভিযোগকারীকে অনেকে বোকাও বলেছেন, এ যেনো আলীবাবার আশ্চর্য প্রদীপের মতো রুপকথার গল্প বানিয়েছেন তিনি।
শনিবার(০৮ অক্টোবর) বিকেলের দিকে দোকানপাট বন্ধ রেখে উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো হয় উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এসময় বাজারের প্রায় পাঁচশতাধিক মানুষ অংশ নেয়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ও জেলা থেকে আগত সকল সংবাদকর্মীরা। মানবন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামলার সাক্ষীরা বলেন, স্যারের নামে এমন একটা ভিত্তিহীন ও মানহানীকর অভিযোগ এবং আমাদের নাম দেয়া হয়েছে কিন্তু আমরা কিছুই জানিনা। স্যার দশমিনা আসার পর আমাদের দশমিনার চিত্র পাল্টে দিচ্ছেন হয়ত কিছু কুচক্রী মহলের তা সহ্য হচ্ছে না। যতদিন ওই কুচক্রকারীদের বিচার না হবে ততোদিনে মাঠ ছাড়ছি না।
এ সময় ব্যবসায়ী এ্যাড. ইকবাল হোসেন বলেন,আমাদের দশমিনার ইউএনও স্যার পটুয়াখালী জেলার ভিতরে শ্রেষ্ঠ ইউএনও।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
আমরা দশমিনাবাসী এ অভিযোগ মানবো না মানিনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর সাথে জড়িতদের বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে রবিবার(০৯ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন দশমিনা উপজেলাধীন স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা।
এ সময় দশমিনা আব্দুর রশিদ শিকদার ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সালাউদ্দিন খায়ের বলেন, ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হাস্যকর। যিনি এই অভিযোগ করেছেন তার মানষিক সমস্যা থাকতে পারে।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার খান ডলি বলেন, তাপস নামের কোনো ব্যাক্তির অস্তিত্ব দশমিনায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। জনসাধারণের ভীর দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে এই অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু। আমরা এই মহলে যারা জড়িত আছে তাদের বিচারের দাবী জানাই।