ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের একজন পরিচিত সাংবাদিক ও দৈনিক প্রতিদিনে কাগজের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক এর একটি মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো।ওনার মন্তব্যটি বতর্মান সময় খুবই উপযোগী। ওনার মন্তব্য নিম্ন রুপ সংবাদপত্রকে সমাজের আয়না বলা হয়। সংবাদপত্রের পাতায় ফুটে উঠে সমাজের প্রতিচ্ছবি। সামাজিক উন্নয়ন,মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা,সত্য-সুন্দর এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন,একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন সংগ্রামের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে সংবাদপত্রের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পুর্ন ভিন্ন। এই মহান পেশাটাকে একেকজন একেক ভাবে নিয়েছে। কেউ বিরোধী দলের মামলা-হামলা থেকে বাচার জন্য,কেউ প্রতিপক্ষকে গায়েল করার জন্য,কেউ দল ক্ষমতায় নেই তাই,এখন সাংবাদিক হলে মোটামুটি সরকার দলের রোষানল থেকে বাচতে পারবে এই জন্য এই পেশায় আসা। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বাচার জন্য। মোট কথা একেকজন একেক ভাবে নিয়েছে পেশাটাকে। প্রকৃত পক্ষে সাংবাদিকতা কি এটা? অবশ্যই নয়! অন্যদিকে সাংবাদিকতা এখন দলকানা হয়ে গেছে। নিজ দলের খবর ছাড়া অন্য দলের খবর প্রকাশে আগ্রহী নন। নিজ পছন্দের লোককে হাইলাইট করতে আগ্রহী। অন্যদের নামটা পর্যন্ত লেখতে রাজি হননা সাংবাদিক। এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? যারা সাংবাদিকতাকে একটি মিশন তথা পেশা হিসেবে বিবেচনা করেন,তাদের কাছে দলীয় সংকীর্ণতার উপর পেশাগত সততা এবং আদর্শ বড় বলে বিবেচিত হয়। দল ও দলীয় নেতা ভুল করলে তিনি তাও তুলে ধরবেন। দলীয় আনুগত্যের চেয়ে দায়িত্ব ও দেশপ্রেমকে বড় করে দেখা উচিত। সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা হলো সাংবাদিকদের। সাংবাদিকতা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সম্মানজনক পেশা।সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী,সমাজ ও জাতির বিবেক হিসেবে বলা হলেও বাস্তবের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম পছন্দের। কারণ সাংবাদিকতার মাঠ এখন অনেক বিস্তৃত। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকতা শুধু খবরের কাগজের গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। এখন খবরের কাগজের স্থান দখল করে নিয়েছে টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইনগুলো।একজন সাংবাদিকের কাজ কি? তিনি সমাজের সচিত্র প্রতিবেদন তার নিজ মিডিয়ায় প্রকাশ করবে। কিন্তু এখন দেখা যায় সাংবাদিকের হাতে একটা মোবাইল ফোন আছে। তিনি ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তথ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই না করেই ফেসবুকে পোস্ট করে তার সাংবাদিকতা শেষ করেন। এই কাজটা সাধারণ মানুষ করতে পারেন। কিন্তু একজন সাংবাদিক করতে পারেননা। তার ফেসবুকে কোন বিষয়ে পোস্ট করতে হলে অন্তত ১০ বার ভাবতে হবে তাকে। ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে একজন সাংবাদিক ফেসবুকে পোস্ট করাটা মোটেই উচিত নয়। কারণ সাধারণ মানুষ সাংবাদিকের ফেসবুকটাকেও মিডিয়া মনে করে। সমাজের আরো দশটা মানুষের থেকে আলাদা হয়ে ভাবতে হয় একজন সাংবাদিককে। অনেক সাংবাদিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গণ্যমান্যদের সঙ্গে হাহা হিহি করে সেলফি তোলেন। সেগুলো আবার গর্ব করে তার ফেসবুকে আপলোড করেন। একবার ভাবুন তো, যার সঙ্গে আপনি সেলফি তুলতে গেলেন,তিনি কি কখনও আপনার সঙ্গে সেলফি তুলতে আসছেন?
মানুষ যেখানে ভাবনা শেষ করে,সেখান থেকে একজন সাংবাদিকের ভাবনা শুরু হয়।এই ভাবে নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে হবে কেন? নিজেকে হালকাভাবে উপস্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই।এই ফেসবুক পোস্ট সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ কোন বিষয়ে জানার জন্য সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর আপনি ফেসবুকে একটা পোস্ট করে বিষয়টির গুরুত্ব শেষ করে দিলেন। আপনার ফেসবুক সাংবাদিকতার কারণে মুলধারার গণমাধ্যমগুলো এই সংবাদটি আর ছাপতে চায়না। তখন ঘটনার আসল রহস্যও বের করা বা জানা যায়না। এই জন্য গণমাধ্যমকর্মীকে অবশ্যই ফেসবুক পোস্ট থেকে যত সম্ভাব বিরত থাকতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অন্য হিসাব।সংবাদপত্র বর্তমানে একটি দলিল,যা যুগ যুগ ধরে সংরক্ষন করে রাখা যায়। সংবাদপত্র মূলত পাঠকের জন্য এবং সে পাঠক অবশ্যই সমাজমনস্ক পাঠক। সংবাদপত্র যখন নির্বিঘ্নে সমাজের নানা ঘটনার একটি নিরপেক্ষ সংবাদচিত্র পাঠকদের উপহার দিতে পারে,তখন সে সংবাদপত্র শুধু পাঠকের খোরাক যোগায় না, একজন সাধারণ পাঠককেও সু-নাগরিক করে তোলে। সাংবাদিকের লিখনীর কারনে সংবাদপত্রের সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়। আপনি স্থানীয় খবরগুলো সঠিক তথ্য যাচায় করে খবরের পিছনের খবরকে যখন শিরোনাম করবেন, তখন আপনার ওই পত্রিকার সার্কুলেশন অটোমেটিক বৃদ্ধি পাবে। পাঠক আপনার পত্রিকা পড়তে আগ্রহী হবেন। আপনি পাঠককে খোঁজতে হবেনা।পাঠক আপনাকে খোঁজবে।অনেকে মনে করছেন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল বৃদ্ধির সাথে সাথে সংবাদপত্রের গুরুত্ব লোপ পেতে পারে। আসলে এটা ঠিক নয়। সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেছনের ভূমিকা উপস্থাপন এবং সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজতে সংবাদপত্রের বিকল্প নেই।