ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি :
আজ জাতীয় কবি এক সময়ের বড় অভাগা হল কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার চার বছরের শিশু বুলবুল যে রাতে মারা গিয়েছিল,সে রাতে তার পকেটে একটা কানাকড়িও ছিল না। অথচ কাফন,দাফন,গাড়িতে করে দেহ নেয়া,গোরস্থানে জমি কেনার জন্য দরকার১৫০ টাকা। সে সময় ১৫০ টাকা অনেক এতো টাকা কোথায় পাবে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতে লোক পাঠানো হল। টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি. এম লাইব্রেরি দিয়েছিল ৩৫ টাকা। আরও অনেক টাকা বাকি। টাকা জন্য ঘরে দেহ রেখে কবি গেলেন একজন প্রকাশকের কাছে।প্রকাশক শর্ত দিল।এই মুহূর্তে কবিতা লিখে দিতে হবে। তারপর টাকা। তখন কবি মনের নীরব কান্না, যাতনা লিখে দিলেন কবিতায়- “ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি করুন চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।।”
কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছেন ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দ্বারা। তিনি তার শেষ অভিভাষণে লিখেছিলেন…
“আমাকে বিদ্রোহী বলে খামোখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এই নিরীহ জাতটাকে আঁচড়ে- কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়া বার ইচ্ছা আমার কোনোদিনই ছিল না। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে।যা মিথ্যা পুরাতন- পচা সেই মিথ্য সনাতনের বিরুদ্ধে, ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনোটায় নয়। আমি কেবল মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি….।”
বস্তুত মানুষকে, মানুষের ধর্মকে নজরুল বড় করে দেখেছেন আজীবন। তিনি চেয়েছেন মানুষের কল্যাণ, সমাজের মঙ্গল, স্বদেশের স্বাধীনতা। তাই হিন্দু বা মুসলমান নয়; বিদ্রোহের জন্য মানুষের প্রতিই ছিল তাঁর উদাত্ত আহ্বান। তিনি কল্পনা করেছেন এক সাম্যবাদী সমাজের, যেখানে নেই শোষণ-শাসন, বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িক ভেদ; নেই আদি-জনগোষ্ঠীর প্রতি কোনো তুচ্ছতাবোধ।
“গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হ’য়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!
… … … ..মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির কাবা নাই।”
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিলো ‘দুখু মিয়া’। প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। কাজ করেছেন লেটো গানের দলেও। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘ভাঙার গানের মতো কবিতা; ‘ধূমকেতু’র মতো সাময়িকী। আবার জেলে বন্দী হয়ে লিখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সেই আজ দুখু মিয়ার জন্মদিন. শুভ হোক-আমিন । (তথ্য সংগৃহীত