হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের বাহুবলে প্রেমিক যুগলের পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় প্রেমিকের বিরুদ্ধে বিয়ের ৭ মাস পর অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
রবিবার (২১ মে ) সকালে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার পূর্ব জয়পুর এলাকা স্বামী ( প্রেমিক ) তাজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে স্ত্রী ( ভিকটিম ) শামিমা আক্তার সুমাইয়া কে উদ্ধার করে পিবিআই পুলিশ। দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
গত ৭ মে ২০২৩ইং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে প্রেমিক তাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন শামিমা আক্তার সুমাইয়ার বাবা মনছুর খাঁন।
মেয়েটি ২২ ধারার জবানবন্দিতে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। তাদের মধ্যে দুই/ আড়াই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ছেলের পরিবার থেকে বিয়ে প্রস্তাব হয়েছে কিন্তু মেয়েটির মা বাবা রাজি হয়নি। পরে তারা স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘর-সংসারও করেছে এবং বর্তমানে সে তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছে। সে ৬ মাসের গর্ভবতী, তার মা বাবা বলেছে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলার জন্য। সে তার স্বামী তাজ উদ্দিনের সঙ্গে থাকতে চায় ।
ভুক্তভোগীর পরিবার, স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চিচিরকোট গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে দিন মজুর তাজ উদ্দিন এর সাথে পাশ্ববর্তি পূর্ব জয়পুর গ্রামের মনছুর খাঁনে মেয়ে সুমাইয়া আক্তার শামিমার সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেয়ের সঙ্গে মেয়ের মা মোছাঃ নাছিমা আক্তার ও বাবা মনসুর খান মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। পড়ে মেয়েটি সুযোগ পেয়ে এক দৌড়ে প্রেমিকের বাড়িতে চলে যায়। জন্ম দাতা মা বাপার বিরুদ্ধে লাইভে এসে অকপঠে বলে গেল মেয়ে শামিমা আক্তার সুমাইয়া। ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের বাড়িতে বিয়ের আলাপ নিয়ে গেলেও মেয়ের মা বাবা ছেলের পক্ষের লোকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি ছেলের পক্ষের লোকজন এলাকার মুরব্বিদের অবগত করেও কোন প্রতিকার পাননি।
প্রেমের সম্পর্কের কারনে নিজেদের ইচ্ছায় ২০২২ সালের শনিবার (১৫ অক্টোবর) পালিয়ে মেয়ের বাবা মনছুর খাঁন ও মা নাছিমা আক্তারের উপস্থিতিতে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ি বিয়ে হয়।
বিয়ের আইনগত স্বীকৃতির জন্য ওই দিন হবিগঞ্জ বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের এডভোকেট শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে বিয়ের হলফনামা সম্পাদন করে তারা। যার ক্রমিক নম্বর ৩০৫৮। তার পরের দিন ১৬ অক্টোবর তারিখে কাজী মোঃ রোকন উদ্দিন খাঁনের মাধ্যমে নিহাকনামা রেজিষ্ট্রার করে। যাহা ক্রমিক নং ৩৭ , বলাম নং ৬/২২ ।
এদিকে পূর্ব আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে সুমাইয়ার বাবা কুট-কৌশলী মনছুর খাঁন তাজ উদ্দিনের বাবা জালাল মিয়ার কাছ থেকে জমি ক্রয়ের কথা কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেয়। ওই ধারের টাকা আদায়ের জন্য বলা হলে মনছুর খাঁন রেগে যান।
এরপরই অতি গোপনে সুমাইয়ার বাবা মনছুর খাঁন হলফ নামার উল্লেখিত তারিখের ২ মাস পর ১৯/১২/২০২৩ ইংরেজি বিদ্যালয়ে যাবার পথ তার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার শামিমা কে অপহরনের পর ধর্ষণ করা হয়েছে মর্মে ধার করা পাঁচ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ের ৬৪ দিন পর গত ৭ মে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পাতানো নালিশী অভিযোগ দায়ের করেন, যার মামলা নং ৬২/২৩ ।
ওই মামলায় অপহরণকারী হিসেবে মেয়ে জামাই তাজ উদ্দিন সহ অজ্ঞাত আরো ৪ জন আসামী করেন সুমাইয়া আক্তার শামিমার বাবা মনছুর খাঁন।
অভিযুক্ত তাজ উদ্দিন বলেন, ২০২২ সালে আমরা স্বেচ্ছায় আদালতে গিয়ে একই এলাকার শামিমা আক্তার সুমাইয়া কে কোর্ট ম্যারেজ করে কাবিন নামা রেজিস্ট্রার করি। বিয়ের পর আমরা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছি। কিন্তু বিয়ের ৭ মাস পর আমার শশুর মোঃ মুনছুর খাঁন অন্যায়ভাবে আমার বিরুদ্ধে অপহরণ ও নারী শিশু নির্যাতন মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যাহা সম্পর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার স্ত্রী (ভিকটিম) মোছাঃ শামিমা আক্তার সুমাইয়া ৬ মাসের গর্ভবতী। আমার শ্বশুরের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চাই।